camy car canada

কানাডার অটোয়ায় গাড়ি কারখানায় ফের ছাঁটাই, সোমবার কাজ হারাতে চলেছেন শত শত শ্রমিক

User avatar placeholder
Written by piash2004

April 12, 2025

জেনারেল মোটরস ইনগারসোলে ইভি ডেলিভারি ভ্যান তৈরির কাজ সাময়িকভাবে স্থগিত করে বলছে— ‘ব্রাইটড্রপ ও ক্যামি প্ল্যান্টের ভবিষ্যতের প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। তবে এ সিদ্ধান্তকে অন্টারিওর অটো শিল্পের জন্য আরেক দুঃসংবাদ হিসেবে দেখছে অটোশ্রমিক সমাজ।

শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ইউনিফর শুক্রবার জানিয়েছে— ইনগারসোলের জিএম ক্যামি অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্টে সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে ব্যাপক ছাঁটাই। সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে ব্রাইটড্রপ ইলেকট্রিক ডেলিভারি ভ্যান উৎপাদন। এমনকি ভবিষ্যতে গাড়ি তৈরির মাত্রাও কমানো হবে।

ইউনিফরের জাতীয় সভাপতি লানা পেইন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত ইনগারসোল ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের শত শত শ্রমজীবী পরিবারের জন্য এক বিধ্বংসী আঘাত। জেনারেল মোটরসের উচিত এই মন্দার সময়ে চাকরি হারানোর আশঙ্কা কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। একই সঙ্গে সরকারের সব স্তরের দায়িত্ব, কানাডার অটোশ্রমিক ও ‘মেড ইন কানাডা’ পণ্যের পাশে দাঁড়ানো।”

শুক্রবারের এই ঘোষণা কানাডার অটোশিল্পে চলতি মাসে হওয়া একাধিক ছাঁটাইয়ের মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন। এপ্রিলের ৩ তারিখ থেকে স্টেলান্টিসের উইন্ডসর প্ল্যান্টে ৪,৫০০ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের মুখে পড়েছেন। সেদিন থেকেই কার্যকর হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বব্যাপী অটো আমদানিতে আরোপিত শুল্ক।

শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, উইন্ডসর ও মিশিগানের ওয়ারেন-এ স্টেলান্টিসের প্ল্যান্ট বন্ধ থাকায়, কানাডা ও মার্কিন অটো যন্ত্রাংশ শিল্পে আরও প্রায় ১২,০০০ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। এই ঘোষণার ঠিক আগের দিনই প্রকাশিত হয়েছিল আরেকটি প্রতিবেদন, যেখানে বলা হয়— ডেট্রয়েটের জিএম ফ্যাক্টরি জিরো-তে প্রায় ২০০ কর্মী সাময়িক ছাঁটাই করা হয়েছে।

জিএম কানাডা টরন্টোর ‘দ্য স্টার’ পত্রিকাকে পাঠানো এক বিবৃতিতে ছাঁটাইয়ের কথা নিশ্চিত করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোম্পানি “অপারেশন ও কর্মসংস্থানের দিক থেকে সাময়িক কিছু পরিবর্তন আনছে।”

জিএম-এর কর্পোরেট কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর নাটালি নানকিল লিখেছেন, “জিএম ক্যামি প্ল্যান্ট ও ব্রাইটড্রপ প্রকল্পের ভবিষ্যতের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছে এবং কর্মীদের এই রূপান্তরের সময় পূর্ণ সহায়তা দেবে।”

১,২০০-রও বেশি কর্মীর প্রতিনিধি ইউনিফর জানিয়েছে, কোম্পানি ১৪ এপ্রিল থেকে সাময়িক ছাঁটাই শুরু করবে। তবে মে মাসে সীমিত উৎপাদনের জন্য কর্মীদের ফেরানো হতে পারে।

ইউনিয়নের তরফে জানানো হয়েছে, এর পর অক্টোবর পর্যন্ত প্ল্যান্টটি বন্ধ রাখা হবে। তারপর শুরু হবে একটি মাত্র শিফটে উৎপাদন। ফলে ৫০০ জনের বেশি কর্মী “অনির্দিষ্টকালের জন্য” চাকরি হারাতে পারেন।

নানকিল অবশ্য জোর দিয়ে জানিয়েছেন, ইনগারসোলের জিএম প্ল্যান্ট বন্ধের সঙ্গে ট্রাম্পের শুল্কের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত একান্তই বাজারের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের ভারসাম্য রক্ষা ও মজুদের সমন্বয় ঘটাতে নেওয়া হয়েছে।”

এদিকে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে লানা পেইন মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্কনীতি এবং ইভি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ হ্রাসের পদক্ষেপ নিয়ে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতি উত্তর আমেরিকার বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্পকে পিছিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে।

পেইনের ভাষায়, “ভুল করবেন না— গোটা বিশ্ব জোরকদমে বৈদ্যুতিকায়নের দিকে এগোচ্ছে। এখন যদি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র থেমে যায়, তাহলে আর কখনও আমরা সেই দৌড়ে পেছন ফেরা ধরতে পারব না।”

এটাই প্রথম নয়— এর আগেও ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির পর ক্যামি প্ল্যান্টে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছিল। ইউনিফর লোকাল চেয়ার মাইক ভ্যান বুকেল মার্চের শুরুতে ‘দ্য স্টার’-কে জানান, তখনো কর্মীদের দুই সপ্তাহের জন্য বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছিল— “ভলিউম কারেকশন” কারণ দেখিয়ে, ট্রেড পেনাল্টি নয়।

গত শুক্রবারের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিফর প্রতিনিধি বুকেল বলেন, “আমাদের সদস্যরা ইতিমধ্যেই বহু কষ্ট সহ্য করেছেন, এখন আবার চাকরি হারানোর আশঙ্কায়।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের সদস্যদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও গর্ব আছে বিশ্বমানের ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরি করার। আমাদের শুধু সুযোগ দরকার।”

এছাড়া কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি নির্বাচনী প্রচারে বলেছেন, এই ছাঁটাই “গভীর বেদনাদায়ক খবর”— শুধু এই কর্মীদের জন্য নয়, গোটা দেশের অটোশিল্পের জন্য। এক্স-এ (পূর্বতন টুইটার) পোস্ট করে তিনি লেখেন, “আমরা প্রতিদিন লড়ব, সেই শ্রমিকদের জন্য— যারা এই দেশ গড়েন।” তিনি জানান, ইউনিফর প্রেসিডেন্ট পেইনের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।

কার্নি আরও বলেন, কানাডা-আমেরিকা মন্ত্রিসভা কমিটি এমন একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে— যেটা ভবিষ্যতের সরকার, যেই আসুক, তা ব্যবহার করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য। শুক্রবার সকালে অটোয়ায় হওয়া কমিটির বৈঠকের পরে তিনি এই মন্তব্য করেন।

কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পয়লিয়েভ্রে শুক্রবার বলেন, তিনি “অত্যন্ত মর্মাহত” এই ছাঁটাই শুনে এবং ইতিমধ্যেই বুকেলের সঙ্গে কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, “আমরা তাদের কাজ জারি রাখতে সাহায্য করব, যাতে তারা চাকরি হারাতে না হয়। কনজারভেটিভ সরকার এই শুল্ক তুলে নিতে এবং সার্বভৌমত্ব ও অর্থনীতিকে রক্ষা করে এমন এক চুক্তির জন্য জোর দেবে।”

(টরন্টো স্টার অবলম্বনে)

Image placeholder

Leave a Comment