৩৮০ লেখক: গাজায় গণহত্যা বন্ধ চাই, ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাই

User avatar placeholder
Written by piash2004

May 28, 2025

লেখক জেডি স্মিথ, ইয়ান ম্যাকইয়ান, রাসেল টি ডেভিস, হানিফ কুরেইশি, ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস এবং পরিবেশবিদ জর্জ মনবিয়ো সহ ৩৮০ জন লেখক ও সাহিত্যিক গোষ্ঠী এক যৌথ চিঠিতে গাজায় ইসরায়েল সরকারের যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, “গাজায় যা ঘটছে, তা ‘গণহত্যা’ কিংবা ‘গণহত্যার কার্যকলাপ’—এই শব্দগুলোর ব্যবহার আর আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ কিংবা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে বিতর্কের বিষয় নয়।” এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন উইলিয়াম ডালরিম্পল, জিনেট উইন্টারসন, ব্রায়ান এনো, কেট মস, আরভিন ওয়েলশ এবং এলিফ শাফাক।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ—এই তিনটি সংস্থাই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) কর্তৃক সংঘটিত কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যার স্পষ্ট উদাহরণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি, ইসরায়েলি মন্ত্রীরা বেজালেল স্মোটরিচ এবং ইতামার বেন-গভির প্রকাশ্য বক্তব্যে ‘গণহত্যামূলক মনোভাব’ প্রকাশ করেছেন।

এই লেখকগোষ্ঠী জাতিসংঘের মাধ্যমে গাজায় অবাধ খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং এমন একটি যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন, “যা ফিলিস্তিনিদের জন্য নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে, ইসরায়েলি পণবন্দিদের মুক্তি দেবে এবং ইসরায়েলের জেলে অন্যায়ভাবে আটক হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির পথ তৈরি করবে।” চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, যদি ইসরায়েল সরকার অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বানে সাড়া না দেয়, তবে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত।

এই চিঠির উদ্যোক্তা ছিলেন লেখক হোরাশিও ক্লেয়ার, কাপকা কাসাবোভা ও মনিক রফি। এখন পর্যন্ত এতে ৩৮০টি স্বাক্ষর জমা পড়েছে।

চিঠির শুরুতে স্থান পেয়েছে একটি কবিতা—‘অ্যা স্টার সেড ইয়েস্টারডে’। এটি ফিলিস্তিনি কবি হিবা আবু নাদার লেখা, যিনি ২০২৩ সালের অক্টোবরে এক ইসরায়েলি বিমান হানায় নিহত হন। কবিতায় লেখা:

“আর যদি একদিন, হে আলো

গোটা মহাবিশ্বের

সব গ্যালাক্সিতে

আমাদের আর জায়গা না থাকে

তুমি বলবে: ‘আমার হৃদয়ে এসো

সেখানেই অবশেষে তুমি নিরাপদ থাকবে।’”

চিঠিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, “এই কবিতায় আবু নাদা গাজার মানুষের জন্য এক মহাজাগতিক আশ্রয় কল্পনা করেছিলেন—যা তারা আজকের এই প্রাণঘাতী বাস্তবতায় কল্পনাও করতে পারে না।”

চিঠিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিরা ‘একটি বিমূর্ত যুদ্ধের বিমূর্ত শিকার’ নন। “প্রায়শই, শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে অবিচারকে ন্যায্যতা দিতে, অস্বীকারযোগ্যকে অস্বীকার করতে, এবং অপ্রতিরোধ্য অন্যায়কে রক্ষা করতে। আর বহুবার, সঠিক শব্দগুলো—যেগুলোর গুরুত্ব ছিল—তাকেও নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে, সঙ্গে তাদেরও, যারা এই শব্দগুলো লিখতে পারতেন।”

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, “গণহত্যা” শব্দটি ‘স্লোগান’ নয়। এর সঙ্গে আইনি, রাজনৈতিক এবং নৈতিক দায়বদ্ধতা জড়িত।

চিঠিটি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনারের কার্যালয় থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়েছে: “যখন রাষ্ট্রগুলো শব্দ নিয়ে তর্ক করে—এটি কি গণহত্যা, না কি নয়—ততক্ষণে ইসরায়েল গাজায় জীবনের ধারাবাহিক ধ্বংস চালিয়ে যাচ্ছে। স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে চালানো এই হামলায় বেঁচে থাকা মানুষদের নির্মূল ও স্থানচ্যুত করা হচ্ছে একপ্রকার দায়মুক্তির মধ্য দিয়ে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এর আগে বলেছিলেন, “ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ শুধু মিথ্যাই নয়, এটি চূড়ান্তভাবে অশোভন। আর বিশ্বব্যাপী যাঁরা সৎ, তাঁরা এই অভিযোগ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবেন।”

হামাস-শাসিত গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর ওই একই দিনে হামাস-নেতৃত্বাধীন এক হামলায় ইসরায়েলে ১,২০০ জন নিহত হন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, “যেমনটা সত্য যে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে হামাস যেসব নৃশংসতা চালিয়েছে তা যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ—তেমনি এটাও সত্য যে, আজ গাজার জনগণের ওপর যেটা চলছে, তা একটি গণহত্যার দৃষ্টান্ত।”

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, “আমরা দর্শক-সমর্থকের ভূমিকায় নিজেদের দেখতে রাজি নই। এটা শুধু আমাদের অভিন্ন মানবতা কিংবা মানবাধিকারবোধের প্রশ্ন নয়; এটা আমাদের সময়ের লেখক হিসেবে আমাদের নৈতিক যোগ্যতার প্রশ্ন, যা প্রতিদিন কমে আসছে—যতদিন আমরা মুখ বন্ধ রাখছি এবং এই অপরাধকে ধিক্কার জানাচ্ছি না।”

এই অবস্থান গ্রহণ করে লেখকেরা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, “আমরা ঘৃণা করি এবং সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করি অ্যান্টিসেমিটিজম, ইহুদি-বিরোধী এবং ইসরায়েল-বিরোধী যেকোনো বিদ্বেষকে। আমরা ঘৃণা করি এবং নিন্দা করি—লেখায়, বক্তৃতায়, কিংবা কর্মে—ফিলিস্তিনি, ইসরায়েলি এবং ইহুদি জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত যেকোনো হামলা, ঘৃণা বা হিংসাকে।”

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন স্কটিশ পেন, জনাথন কো, স্যুজি অরব্যাক, কেভিন ব্যারি, বেঞ্জামিন মায়ার্স, অ্যান্ড্রু ও’হেগান, সারা বার্নস্টেইন, ফিয়ামেত্তা রোকো, লুসি জোনস, মনিক রফি, ইন্ডিয়া নাইট, নিক লেয়ার্ড, নিনা স্টিবি, শন হিউইট, শিয়াওলু গো, ক্রিস পাওয়ার, জো ডানথর্ন এবং মারিনা ওয়ার্নার।

চিঠির শেষ পংক্তিতে লেখা রয়েছে: “এই গণহত্যা আমাদের সকলকে যুক্ত করছে। আমরা এই অপরাধের সাক্ষী, এবং নীরব থেকে এই অপরাধকে অনুমোদন দিতে রাজি নই।”

সূত্র: গার্ডিয়ান

Image placeholder

Leave a Comment