হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়ের জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী ব্যবসা-ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ফ্রানচেস্কা গিনোকে চাকরিচ্যুত করেছে কর্তৃপক্ষ। তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ—গবেষণার তথ্য জালিয়াতি।
ব্যবহারিক আচরণবিজ্ঞান নিয়ে তাঁর কাজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচিত হয়, বিশেষত “সততা কীভাবে উৎসাহিত করা যায়” এই প্রশ্নে। হার্ভার্ডের ‘মাইন্ড ব্রেন বিহেভিয়ার’ ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এমনকি ফেডারেল সংস্থাগুলোর সঙ্গেও কাজ করেছেন।
কিন্তু সম্প্রতি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের অনুষদের সদস্যদের জানানো হয়—বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিং বোর্ড তাঁর টেনিওর প্রত্যাহার করেছে এবং তাঁকে বরখাস্ত করেছে। স্থানীয় সম্প্রচারমাধ্যম GBH News জানায়, এই সিদ্ধান্ত এসেছে এক অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর, যেখানে অন্তত চারটি গবেষণাপত্রে তথ্য বিকৃতির প্রমাণ মিলেছে। হার্ভার্ডের ইতিহাসে এটি এক বিরল সিদ্ধান্ত; GBH এর খোঁজে আরও কোনো টেনিওর প্রত্যাহারের নজির মেলেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে আরও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। গিনো নিজেও GBH-এর অনুরোধে সাড়া দেননি।
তবে ২০২৩ সালে নিজের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি লিখেছিলেন—
“I did not commit academic fraud. I did not manipulate data to produce a particular result. I did not falsify data to bolster any result.”
এই বরখাস্তের সময়টা এসেছে এমন এক প্রেক্ষাপটে, যখন হার্ভার্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের মধ্যে উত্তেজনা চরমে। গত দেড় মাসে প্রশাসন হার্ভার্ডের ২.২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল বাতিল, ট্যাক্স ছাড় প্রত্যাহার এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের হুমকি দেয়। প্রশাসনের দাবি, এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে অ্যান্টিসেমিটিজম রোধের নামে; কিন্তু হার্ভার্ডের ভাষায়, এটি একটি “campaign of retribution।”
এই প্রেক্ষাপটে গিনোর বরখাস্ত নিয়ে বিজনেস স্কুলের অনেক অধ্যাপক মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে গিনোর গবেষণা নিয়ে প্রশ্ন নতুন নয়।
২০০৮ সালে হার্ভার্ডে ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ইতালিতে অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনায় পিএইচডি শেষ করেন। ২০২০ সালের মধ্যে তিনি ছিলেন হার্ভার্ডের পঞ্চম সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত কর্মী—বাৎসরিক আয় প্রায় ১০ লাখ ডলার, আর একেকটি বক্তৃতা থেকে আয় ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার পর্যন্ত।
২০১২ সালে তাঁর অন্যতম বিখ্যাত গবেষণায় দেখা যায়, কর বা বীমার ফর্মের একেবারে উপরে সততার ঘোষণা যুক্ত করলে মিথ্যা দেওয়ার প্রবণতা ১০ শতাংশ কমে যায়। এই গবেষণা ও তার প্রয়োগে আগ্রহ দেখায় ওবামা প্রশাসনসহ বহু সরকার, যাদের বিশ্বাস ছিল এতে করে বিপুল রাজস্ব ফেরত পাওয়া সম্ভব।
কিন্তু ২০২১ সালে একটি ব্লগ—Data Colada—হার্ভার্ডকে জানায় যে, তারা সন্দেহ করছে গিনো ২০১২ সালের সেই গবেষণাসহ আরও তিনটি গবেষণার তথ্য বিকৃত করেছেন। এক সাম্প্রতিক পিএইচডি গবেষক প্রথম সেই অসঙ্গতি নজরে আনেন, বিশেষ করে গাড়ির বীমা নিয়ে করা গবেষণায় ও একাধিক গবেষণায় যেখানে বলা হয়েছিল—নেটওয়ার্কিং-এর পর মানুষ ‘মলিন’ অনুভব করে।
পরবর্তীতে এক পূর্ণাঙ্গ তদন্তে নিয়োগ পাওয়া একটি বাইরের সংস্থা মূল কাঁচা তথ্য ও প্রকাশিত তথ্যের তুলনা করে বিস্তর অমিল খুঁজে পায়। ১২০০ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনে গিনোর দায় স্পষ্ট করা হয়।
তদন্ত চলাকালে গিনোকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয় এবং সংশ্লিষ্ট গবেষণাগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ২৫ মিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা করেছিলেন, যা গত সেপ্টেম্বরেই খারিজ হয়ে যায়।
তাঁর দাবি, তদন্ত চলাকালে তাঁকে সঠিকভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। ওয়েবসাইটে তিনি অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় কতজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে তিনি পরামর্শ করবেন তা সীমিত করে দেয়, এবং তাঁকে সহ-গবেষকদের সঙ্গে আলোচনা করতেও নিষেধ করা হয়।
আরও পুরোনো এক ঘটনার কথা উঠে আসে The New Yorker-এর এক প্রতিবেদনে—২০১৫ সালে তাঁর এক গ্র্যাজুয়েট ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানান, তিনি সন্দেহ করছেন গিনো গবেষণার কাঁচা তথ্য নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তক্ষেপ করছেন। সূত্র একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম