শুধু প্রবাসী আয় বাড়ানো নয়, আরও যা যা করতে হবে

লেখা: মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সিকদার ও কে এম নূর-ই-জান্নাত

দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কী শক্তিশালী অবদান রাখছে, তা কারেও অজানা নয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ও জাতীয়ভাবে প্রবাসীদের এই অবদানের সেই অর্থে স্বীকৃতি নেই, থাকলেও তা যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয় না। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকা, প্রবাসী আয় বাড়ানো, প্রবাসীদের মর্যাদা বৃদ্ধি, অভিবাসনপ্রক্রিয়ায় সংস্কার—এসব বিষয় নিয়ে লিখেছেন মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সিকদার ও কে এম নূর-ই-জান্নাত

দৌরাত্ম্য। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি, বিগত সরকারের চার সংসদ সদস্য মালয়েশিয়ায় অভিবাসনের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতেন। সিন্ডিকেটটি দেড় বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা বানিজ্য করেছে। তাঁদের এই দৌরাত্ম্যের কারণে সে সময় যাঁরা অভিবাসন নিয়ে কাজ করতেন, তাঁরা সবাই এই প্রভাবশালীদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। যদিও তাঁদের অনেকেরই রিক্রুটিং এজেন্ট ছিল, কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তাঁরা দাবি করতেন, দালালদের কারণে এ অভিবাসন খরচ বাড়ছে।

অষ্টমত, আমাদের অনুরোধ থাকবে, প্রধান উপদেষ্টা যেন তাঁর বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন। বহির্বিশ্বে কারিগরি শিক্ষাকে যে সম্মানের সঙ্গে দেখা হয় এবং এখান থেকে শিক্ষার্থীদের যে উচ্চ বেতনের কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, তা যেন তিনি তাঁর বক্তব্যে আলোকপাত করেন। দেশের অভিভাবকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সন্তানদের টেকনিক্যাল সেন্টারে পাঠাতে তিনি উৎসাহ দিতে পারেন। এতে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপারে মানুষের চিন্তাভাবনা ও ধ্যানধারণা পরিবর্তন আসতে পারে।আমাদের অনুরোধ থাকবে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিকীকরণে এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে যেন যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রয়োজনে এ খাতে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন। তাঁদের অনেকেই ওই সব দেশে অবৈধভাবে প্রবেশের কারণে জেল খাটছেন, শাস্তি পাচ্ছেন। তাঁদের দ্রুত দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে এবং দেশে তাঁদের প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।দেশের অর্থনীতিতে এই প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, দেশে আসার পর তাঁরা কোনো ধরনের সামাজিক মর্যাদা পান না। বিভিন্ন দূতাবাস থেকে শুরু করে বিমানবন্দরগুলোয় লাগেজ হারিয়ে যাওয়া, ট্রলি খুঁজে না পাওয়ার পাশাপাশি আলাদা কোনো লাইন না থাকায় তাঁরা নানা বিড়ম্বনা ও হয়রানির শিকার হন। অথচ প্রবাসীদের অংশগ্রহণ এ গণ-আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।কাজেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে দ্রুত এই গণ-আন্দোলনে অভিবাসীদের ভূমিকার স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাঁদের অভিবাদনের ব্যবস্থা করা। আমরা আশা করছি, চলমান পরিস্থিতি উন্নয়নেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।

মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সিকদার শিক্ষক ও সদস্য, সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।কে এম নূর-ই-জান্নাত গবেষণা সহযোগী, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।