প্রাক্তন মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা অবশেষে মুখ খুললেন তাঁদের দাম্পত্য জীবন ঘিরে ঘনিয়ে ওঠা গুঞ্জন নিয়ে। কয়েক দশকের দাম্পত্য জীবনের পর হঠাৎই বিচ্ছেদের জল্পনা ঘিরে আলোড়ন উঠেছিল রাজনৈতিক মহলে। আর সেই বিতর্কে যেন কিছুটা ঘি ঢেলে দেন স্বয়ং বারাক ওবামা নিজেই, যেখানে তিনি স্বীকার করেন, তাঁদের সম্পর্ক মেরামত করার কাজ চলছে। তার কয়েক দিনের মধ্যেই মিশেল প্রকাশ্যে আনলেন নিজের অবস্থান।
সোফিয়া বুশের ‘Work in Progress’ পডকাস্টে নিজের বক্তব্য রাখার সময়, মিশেল জানান কেন তিনি বছরের শুরুতে কিছু হাই-প্রোফাইল অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। সেখানেই স্পষ্টভাবে জবাব দিলেন বিবাহ-বিচ্ছেদের জল্পনা ঘিরে।
“মজার ব্যাপার হল, আমি যখন ‘না’ বলি, বেশিরভাগ মানুষই সেটা বুঝতে পারে এবং মানিয়েও নেয়,” বলছিলেন দুই কন্যার মা মিশেল।
“কিন্তু এটাই তো মহিলাদের বড় লড়াই— মানুষকে নিরাশ না করার একটা চাপে আমরা থাকি। এতটাই যে, মানুষ ভাবতেই পারে না, আমি আমার নিজের জন্য কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তাই তারা ধরে নেয়, নিশ্চয়ই আমার আর ওবামার মধ্যে সমস্যা চলছে, হয়তো আমরা ডিভোর্সের পথে।”
“সমাজ আমাদের এ ভাবেই দেখতে অভ্যস্ত। আমরা যদি নিজস্বতা নিয়ে এগোই, সমাজের বাঁধাধরা কাঠামোর বাইরে কিছু করি, তাহলেই সেটা নেতিবাচক বা ভয়ঙ্কর কোনও কিছু বলে প্রতিপন্ন করা হয়।”
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই হ্যামিলটন কলেজের পড়ুয়াদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বারাক ওবামা নিজেই বলেন, “আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে একটা বড় ঋণের মধ্যে ছিলাম। তাই এখন মাঝে মাঝে মজার কিছু করে সেই ঋণ শোধ করার চেষ্টা করছি।”
তিনি আরও জানান, প্রেসিডেন্সি পর্ব তাঁদের সম্পর্কের উপর যথেষ্ট চাপ ফেলেছিল। “হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে এসে স্ত্রীকে একটু বেশি সময় দিতে পারছি— এটা একটা বড় স্বস্তি,” বলেছিলেন তিনি ‘CBS Mornings’-এ ২০২৩ সালের মে মাসে।
“আমি সবসময় ভেবেছি আমি একজন যথেষ্ট নিযুক্ত বাবা। কিন্তু পরে বুঝেছি, আমাদের ওপর সমাজের যে নজর ছিল, সেই অস্বাভাবিক পরিবেশে আমাদের মেয়েদের বড় করে তোলার চাপটা ওর ওপর কতখানি ছিল, সেটা আমি পুরোপুরি উপলব্ধি করিনি।”
দাম্পত্য জীবনের চাপ, অভিমান, এবং ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা— খোলাখুলি বললেন বারাক ও মিশেল
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওবামা স্বীকার করে নিয়েছেন, ২০০৯ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদের প্রেসিডেন্সি তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছিল। প্রেসিডেন্সির সময় শুধু তিনি নন, স্ত্রী মিশেল এবং তাঁদের কন্যা মালিয়া (২৬) ও সাশাও (২৩) এক অস্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছে— সেই বোঝাও ছিল মিশেলের উপরেই।
অন্যদিকে, মিশেল ওবামাও আগেই স্বীকার করেছেন, তাঁদের বিবাহিত জীবনে কঠিন সময় এসেছিল। Revolt TV-র একটি প্যানেল আলোচনায় তিনি বলেন, “দশ বছর এমন গেছে, যখন আমি আমার স্বামীকে সহ্যই করতে পারতাম না।”
তিনি বলেন, “লोग ভাবে আমি কটাক্ষ করছি। কিন্তু সত্যি বলতে, তখন আমরা আমাদের কেরিয়ার তৈরি করছি, বাচ্চাদের স্কুল, সংসার— সব কিছুর দায়িত্ব তখন আমাকেই নিতে হচ্ছিল। আমি ভাবতাম, ‘উফ! এটা তো একদম সমান নয়।’”
“আসলে বিয়ে কখনওই ৫০-৫০ হয় না। কোনও দিন আমি ৭০, ও ৩০। আবার কোনও দিন উল্টোটা। কিন্তু দেখুন, আমরা তো ৩০ বছর ধরে একসঙ্গে আছি। আমি দশটা খারাপ বছরের বিনিময়ে এই ৩০ বছরকে ঠিকই বেছে নেব।”
তিনি বলেন, এ সব কথা তিনি খোলাখুলি বলেন এই কারণে, যাতে যুব সমাজ বুঝতে পারে— বিয়ে মানেই নিখুঁত সুখের গল্প নয়। বরং, এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাটাই এক বড় চ্যালেঞ্জ। “অনেকেই ছোটখাটো সমস্যায় বিয়ে ভেঙে দেয়, অথচ এগুলো সম্পর্কের স্বাভাবিক অংশ,” বলেন তিনি।
ডিসি-র রাজনীতি থেকে দূরে, তবু ‘চেকড আউট’ নন, ইঙ্গিত দিলেন মিশেল
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ওবামাদের বিচ্ছেদের জল্পনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। এর পিছনে একাধিক ঘটনা যুক্ত— যেমন, বারাক ওবামা একা গিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের শেষকৃত্যে এবং ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানেও ছিলেন একা। এর পরেই অন্দরমহলের এক সূত্র Page Six-কে জানিয়েছিল, “মিশেল যেন এখন ডিসি-র জীবন থেকে পুরোপুরি সরে গিয়েছেন।”
তবে সেই সমস্ত জল্পনায় কার্যত জল ঢেলে দেন ওবামা স্বয়ং— ভালোবাসা দিবসে। স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি লেখেন, “৩২ বছর একসঙ্গে… আজও তুমি আমার নিঃশ্বাস আটকে দাও।” সঙ্গে পোস্ট করেন একটি সেলফি— যেখানে দু’জনের মুখে সেই পুরনো উজ্জ্বল হাসি।
এ যেন এক নিঃশব্দ বার্তা— সম্পর্ক নিয়ে যতই গুঞ্জন ছড়াক, বারাক আর মিশেল এখনও হাতে হাত রেখেই হাঁটছেন জীবনের পথে।
সূত্র: নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড