বিদেশে কম যাচ্ছেন নারী শ্রমিক

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কাজ করতে যাওয়া নারী শ্রমিকের সংখ্যা দিনদিন কমছে। আগামীতে এ সংখ্যা আরও কমার আশঙ্কা করছেন রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব। তবে তাঁদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণে সৌদিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বাংলাদেশি নারীরা।

ENবিদেশে কম যাচ্ছেন নারী শ্রমিক► সৌদিতে ভাটা, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশসহ নতুন বাজারে আগ্রহ ► আগামীতে বিদেশ যাওয়ার হার আরও কমার আশঙ্কা জিন্নাতুন নূরবিদেশে কম যাচ্ছেন নারী শ্রমিক আপডেট: ০০:২৪, সোমবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪google_newsবাংলাদেশ থেকে বিদেশে কাজ করতে যাওয়া নারী শ্রমিকের সংখ্যা দিনদিন কমছে। আগামীতে এ সংখ্যা আরও কমার আশঙ্কা করছেন রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব। তবে তাঁদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণে সৌদিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বাংলাদেশি নারীরা।এ অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলো থেকে নারী শ্রমিক নিচ্ছে সৌদি আরব। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, ইতোমধ্যে সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকের যাওয়ার হার কমে গেছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর মধ্যে কাতার, লেবানন ও জর্ডানে নারী শ্রমিক যাওয়ার হার কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া কিছু অপ্রচলিত দেশেও কাজের জন্য যাচ্ছেন বাংলাদেশি নারীরা।এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য ও হংকং অন্যতম।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪ সালে এ পর্যন্ত দেশের বাইরে কাজের জন্য গেছেন মোট ৪৩ হাজার ৪০৫ জন নারী শ্রমিক। ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন ৭৬ হাজার ১০৮ জন। এর আগে ২০২২ সালে তা ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন।শ্রমবাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারী শ্রমিকের বড় একটি অংশই সৌদি আরবে কাজ করতে যান। তবে গত কয়েক বছরে সৌদি থেকে নির্যাতিত হয়ে অনেক নারী ফিরে এসেছেন। অনেক নারী নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন এবং খুনের শিকার হয়েছেন। এসব কারণে নারী কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার হার গত দুই বছরে কমেছে।জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর দেওয়া তথ্যে, এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সৌদি আরবে গেছেন ২৬ হাজার ৮৩৪ জন নারী শ্রমিক।এর আগে ২০২৩ সালে গেছেন ৫০ হাজার ২৫৪ জন। তার আগে ২০২২ সালে ৭০ হাজার ২৭৯ জন। এমনকি করোনা মহামারির বছর ২০২১ সালেও ৫৩ হাজার ৮২ জন সৌদিতে গিয়েছিলেন। তবে সৌদি আরবে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমে এলেও মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর মধ্যে কাতার, লেবানন, জর্ডানে গত বছরের তুলনায় নারী শ্রমিকের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাতারে গেছেন ১ হাজার ৭১৬ জন নারী শ্রমিক। এর আগের বছর গেছেন ১ হাজার ৯৫ জন। লেবাননে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গেছেন ৬৮৪ জন। এর আগের বছর গেছেন ৫৯৫ জন। জর্ডানে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নারী শ্রমিক গেছেন ১০ হাজার ৭০৯ এবং এর আগের বছর ৭ হাজার ৮৩৮ জন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ওমানেও নারী শ্রমিকের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।২০২৩ সালে ওমানে ৬ হাজার ৫৪৭ জন গেলেও চলতি বছরের এ পর্যন্ত দেশটিতে বাংলাদেশি নারী শ্রমিক গেছেন মাত্র ৫৬ জন। তবে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে অপ্রচলিত দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৩১ জন নারী শ্রমিক গেছেন। গত বছর গিয়েছিলেন ২৬ জন। এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় নয়, সিঙ্গাপুরে ৬৩, যুক্তরাজ্যে ১ হাজার ৩৬০, ইতালিতে তিন, জাপানে ৭৫, হংকংয়ে ১৬৮, সাইপ্রাসে ৬০, ব্রুনাইতে সাত ও মরিশাসে দুজন নারী শ্রমিক গেছেন। সৌদি আরব থেকে নিয়োগকর্তার নির্যাতনে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গত ৬ এপ্রিল দেশে ফিরেছেন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার রাবিয়া খাতুন (৩৮)। ২০২২ সালে রিক্রুটিং এজেন্সি দ্য ইফতি ওভারসিজের মাধ্যমে গৃহপরিচারিকার ভিসায় সৌদিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত নিয়োগকর্তার নির্যাতনে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরিবারের সঙ্গেও রাবিয়ার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দেশে ফিরে এলে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সহায়তায় তাঁকে পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)-এর নেতা আলী হায়দার চৌধুরী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘হংকংয়ের সঙ্গে আমাদের এমইউ স্বাক্ষর আছে। সংখ্যায় কম হলেও যে নারী শ্রমিকরা হংকং যাচ্ছেন তাঁরা শিক্ষিত এবং প্রশিক্ষিত। মালয়েশিয়ায় নারী শ্রমিকের জন্য কোনো এমইউ স্বাক্ষর না থাকলেও সেখানেও নারীরা যাচ্ছেন। গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের জন্য একসময় বড় বাজার ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ ছাড়া সৌদি আরব সব সময় নারী শ্রমিকদের জন্য বড় বাজার। তবে সৌদিতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে যে সময়ের মধ্যে গৃহকর্মী চায় আমরা সে সময়ে পাঠাতে পারছি না। আবার নারী শ্রমিকদের ভাষাগত দক্ষতা বেশি ভালো নয়। তাঁরা ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্তও নন। বিগত বছরগুলোয় নারী শ্রমিকদের ওপর নানা রকম শারীরিক-মানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন কারণে নারী শ্রমিকরাও সৌদি আরবে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহ হচ্ছেন। আমরা আশঙ্কা করছি সৌদি আরবে আগামীতে বাংলাদেশ থেকে নারী শ্রমিকের যাওয়ার হার আরও কমে আসবে। কার্যাদেশ পাওয়ার পর রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর প্রশিক্ষণ দিয়ে সৌদি পাঠাতে তিন মাস পর্যন্ত লাগে যায়। কিন্তু এখন সৌদি আরব আরও কম সময়ে কর্মী পেতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে নারী শ্রমিক নিচ্ছে। ’ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক শাহ্ আবদুল তারিক বলেন, ‘বিদেশে বিশেষ করে সৌদি আরবে নারী কর্মী কম যাওয়ার পেছনে নারী নির্যাতনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন। কিন্তু সৌদি যাওয়ার পর আমাদের নারী কর্মীরা কোন পরিস্থিতির শিকার হন তা-ও একটি বিষয়। আমরা চাই না তাঁরা কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হোন।