পহেলগামের রক্তাক্ত হামলার পরে ভারতজুড়ে কাশ্মীরিরা হেনস্থার শিকার হচ্ছে

User avatar placeholder
Written by piash2004

April 25, 2025

কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের উপরে সন্ত্রাসী হামলার জেরে দেশজুড়ে কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে হয়রানি, বৈষম্য ও শত্রুভাবাপন্ন আচরণের অভিযোগ উঠে আসছে। রাজনৈতিক লড়াইয়ের প্রকৃত মূল্য চোকাতে হচ্ছে সাধারণ কাশ্মীরিদের। পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের মতো বিভিন্ন রাজ্যে কাশ্মীরি পড়ুয়া ও পেশাজীবীদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, দোকানে কেনাকাটা করতে গেলে বাধা দেওয়া হয়েছে, কোথাও কোথাও হেনস্থা হতে হয়েছে। এই তথ্য দিয়েছে আল জাজিরা।

২২ এপ্রিলের সেই হামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন পর্যটক, আহত হন আরও অনেকে।

জালন্ধরের এক কাশ্মীরি ছাত্র আসিফ দার জানান, দুধ কিনতে বেরোতেই কিছু লোক তাঁকে ঘিরে গালিগালাজ করে বলে, “কাশ্মীরিরাই সব কিছুর মূলে!” হামলার কয়েক দিন পরেও তিনি দুশ্চিন্তা আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন—থাকবেন, না কি ফিরে যাবেন, তা নিয়েই দ্বন্দ্বে ভুগছেন।

উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে এক কট্টর ডানপন্থী নেতা কাশ্মীরি মুসলিমদের শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তার পর থেকেই আতঙ্ক ছড়ায় কাশ্মীরি ছাত্রদের মধ্যে। কেউ কেউ নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছেন, কেউ বা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন কাশ্মীরে ফেরার জন্য।

মুশতাক ওয়ানি নামের এক ছাত্র জানান, অন্তত ১৫ জন পড়ুয়াকে নিরাপদে বাড়ি ফেরাতে তিনি নিজেই উদ্যোগ দিয়েছেন।

কাশ্মীরের বিশ্লেষক শেখ শওকত বলেন, “কাশ্মীরিদের কাঁধে দুটি বোঝা—তারা মুসলিম, এবং তারা কাশ্মীরি। সব দোষ ওদের ঘাড়েই চাপানো সহজ।”

এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কাশ্মীরিদের হেনস্থার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতি কাশ্মীরিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আবেদন জানান। তিনি বলেন, “আমরা শত্রু নই। এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের সম্মতি ছিল না।”

জম্মু শহরের ফার্মাসির ছাত্র উমর পারায় বলেন, “আগে রাতে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আইসক্রিম খেতে যেতাম। এখন সন্ধের পরে আর বাইরে বেরই হই না।”

পহেলগাম হামলার বেঁচে-ফেরা কয়েকজন জানান, বন্দুকধারীরা ধর্ম দেখে লক্ষ্য ঠিক করেছিল। নিহত ২৬ জনের মধ্যে ২৫ জনই ছিলেন হিন্দু। একমাত্র কাশ্মীরি মুসলিম যিনি প্রাণ হারান, তিনি নাকি হামলাকারীদের বাধা দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই মানবিক দিকটি জনমনে সেভাবে প্রভাব ফেলেনি—কাশ্মীরিদের ঘিরে বিদ্বেষই যেন বেশি জায়গা করে নিয়েছে।

এই পরিস্থিতির মধ্যেই ভারত ও পাকিস্তান কূটনৈতিক স্তরে টানা পড়েন বাড়াচ্ছে। পানিবন্টন চুক্তির কিছু ধারা স্থগিত হয়েছে, দু’দেশে কূটনীতিকের সংখ্যাও কমানো হয়েছে। আর এর মধ্যেই, একটিও গুলি না ছুঁড়ে, প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা নিরীহ কাশ্মীরিরা।

কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী একটি সশস্ত্র সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তানের মদতেই এই আক্রমণ। যদিও ইসলামাবাদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, দিল্লি যথাযথ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সূত্র আল জাসিরা

Image placeholder

Leave a Comment