দুই ছাত্রের ‘অ্যান্টি-ফেসবুক’ উদ্যোগে ১৪ দিনে ৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ!

User avatar placeholder
Written by piash2004

April 11, 2025

মাত্র ২১ বছর বয়সে, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জুনিয়র ছাত্র নাথানেও জনসন ও শন হারগ্রো বদলে দিতে চাইছেন ডিজিটাল নেটওয়ার্কিংয়ের ধরন। তাঁদের তৈরি ‘Series’, একটি AI-চালিত প্ল্যাটফর্ম, ১৪ দিনের মধ্যেই ৩ মিলিয়ন ডলারের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংগ্রহ করেছে।

শুরুতে একনজরে—

  • দুই ইয়েল ছাত্র AI দিয়ে বদলে দিচ্ছেন প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং।
  • তাঁদের প্ল্যাটফর্ম গুরুত্ব দিচ্ছে সংযোগে, ঝাঁ-চকচকে প্রোফাইল নয়।
  • ১৪ দিনেই তুলেছেন ৩ মিলিয়ন ডলার।

তবে এই গল্প কেবল টাকা তোলার গতি নিয়ে নয়—এই গল্প দুই কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ উদ্যোক্তার।

জনসন বলেন,“আমরা ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি, কৃষ্ণাঙ্গ এবং টেকনিক্যাল—হার্ভার্ডের গল্পের সম্পূর্ণ বিপরীত। আর এই পার্থক্যই Series-এর নতুন গল্পের জন্ম দিয়েছে, যেখানে মানুষ অনলাইনে নতুনভাবে একে অপরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে।”

তাঁরা বিশ্বাস করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনলাইনে সম্পর্ক গড়ার রীতিই বদলে দিতে পারে। তাঁদের মতে, প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং বর্তমানে এক নিষ্ফল সংখ্যার খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে—জমে থাকা কানেকশন আর অর্থহীন ফলোয়ার সংখ্যা। এই ফাঁকা সংযোগের প্রতিবাদ হিসেবেই জন্ম নেয় Series।

সেরেনডিপিটির’ খেলা

কম্পিউটার সায়েন্স ও ইকনোমিক্স পড়ুয়া জনসন এবং নিউরোসায়েন্স পড়ুয়া হারগ্রো আগে থেকেই উদ্যোক্তা জগতে ঢুকে পড়েছিলেন। তাঁরা চালাতেন The Founder Series পডকাস্ট, যেখানে সফল উদ্যোক্তাদের সাক্ষাৎকার নিতেন।সেই সব আলাপে তাঁরা খুঁজে পান একটি কমন পয়েন্ট—‘ভাগ্য’।

জনসন বলেন, “প্রথম ইনভেস্টর, প্রথম গ্রাহক, প্রথম ফান্ডার—সব কিছুতেই একটা ‘লাক’ ছিল। ভাবলাম, যদি এই লাকটাই আমরা কৃত্রিমভাবে তৈরি করতে পারি?”সেই ভাবনা থেকেই জন্ম Series-এর মূল কাঠামোর। এখানে ব্যবহারকারীরা একটি AI এজেন্ট বা AI বন্ধুকে টেক্সট করে জানাতে পারে—তার কেমন পরিচয় দরকার: কো-ফাউন্ডার, ইনভেস্টর, মেন্টর বা বন্ধু? তারপর সেই AI বন্ধু Series-এর নেটওয়ার্ক ঘেঁটে ঠিক মানুষটিকে খুঁজে দেয়।

‘ফেসবুকের বিপরীত’—নাকি মানব সংযোগের ভবিষ্যৎ?

Series কোনও নতুন ফেসবুক হতে চায় না—তারা চায় ফেসবুকের ভুলগুলো শুধরে একটি বিকল্প গড়ে তুলতে। যেখানে পোস্ট, ছবি বা কনটেন্ট শেয়ার নয়, বরং নির্ভরযোগ্য পরিচয়ই মুখ্য।

জনসন বলেন,“ইনস্টাগ্রামে ছবি, টিকটকে ভিডিও, লিংকডইনে জব পোস্ট… সব কিছুতেই একটা নিজেকে সাজানোর চাপ থাকে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো আপনাকে polished হতে বাধ্য করে।”Series সে চাপ দূর করতে চায়। এখানে মানুষ নিজের AI বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে নিজের প্রয়োজন বোঝায় এবং সেখান থেকেই জন্ম নেয় অর্থবহ পরিচয়।

হারগ্রো যোগ করেন,“আমরা বাস্তব সম্পর্ককে বদলাতে চাই না—আমরা শুধু সেই সঠিক সম্পর্ক খুঁজে পাওয়াটা সহজ করতে চাই।”

ফান্ডরেইজিং-এর যুদ্ধ

জনসন ক্যালিফোর্নিয়ার আর হারগ্রো নিউইয়র্কের কুইন্সের ছেলে। ইয়েলে এসে তাঁরা একসাথে উদ্যোগের জগতে ঝাঁপ দেন।

ছোটবেলা থেকেই জনসন ছিলেন উদ্ভাবক। ৮ বছর বয়সে তিনি দৃষ্টিহীনদের জন্য ওয়াকিং স্টিক বানিয়েছিলেন। হারগ্রো, যিনি একসময় খেলোয়াড় ছিলেন, মনে করেন স্টার্টআপ জীবনের অনিশ্চয়তা খেলাধুলার কাছাকাছি।

তাঁদের ফান্ডরেইজিং শুরু হয় ঠান্ডা ইমেল আর পরিচয়ের চেষ্টায়। প্রথমদিকের “না” শুনে তাঁরা শিখেছেন কেমন করে শুধু একটা প্রোডাক্ট নয়, বরং একটা গল্পও বিক্রি করতে হয়।

তাঁরা Series-কে উপস্থাপন করেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে—জনসনের ভাষায়,“কাউকে প্রপোজ করতে গিয়ে যদি বলি ‘আমি মোটামুটি, আরও হ্যান্ডসাম লোক আছে’, তাহলে কেউ পাত্তা দেবে না। আমি বলতে শিখলাম, আমি-ই সেরা। তবে নৈতিকতা বজায় রেখে।”

ইয়েলের উদ্যোক্তা নেটওয়ার্ক তাঁদের এই যাত্রায় সহায়তা করেছে। হারগ্রো বলেন,“ইয়েল আমাদের এমন এক নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার দিয়েছে যা আমাদের জীবনে অন্যভাবে আসত না।”

এক পর্যায়ে তাঁরা পরিচিত হন Anne Lee Skates-এর সঙ্গে, একজন নামী বেই এরিয়া ইনভেস্টর। ৩৬ ঘণ্টার মাথায় ক্যালিফোর্নিয়া যাওয়া, এক ডিনার—আর সেখানেই চূড়ান্ত হয় তাঁদের প্রথম বড় বিনিয়োগ। এরপর একের পর এক VC গ্রুপের সঙ্গে দেখা এবং ১৪ দিনের মাথায় ৩ মিলিয়ন ডলার নিশ্চিত।

হারগ্রো বলেন,“ওই ডিনারটা আমার জীবনের এক মিলিয়ন ডলারের রাত হয়ে থাকবে।”‘কারোর সম্ভাবনা হেলায় ফেলো না’এই উদ্যোগ জনসন ও হারগ্রোর কাছে শুধু একটা স্টার্টআপ নয়, এটা তাঁদের ছোটবেলার নিজস্ব স্বপ্নের পূরণও।

জনসন বলেন,“আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন এমন কাউকে দেখতাম না, যিনি আমার মতো দেখতে, আমার মতো কিছু তৈরি করছেন। এখন নিজেকে দেখে আমি জানি—আমার ছোটবেলার আমি আজ আমাকে দেখে গর্বিত হতো।”

তাঁদের বিশ্বাস, AI-ভিত্তিক যোগাযোগ-নির্ভর আগামী দিনে মানুষ এমন প্ল্যাটফর্মকেই বেছে নেবে, যেখানে আত্মপ্রকাশ না করে সত্যিকারের সংযোগ সম্ভব।

হারগ্রো বলেন,“কারোর চেহারা, প্রোফাইল দেখে তাকে বাতিল করে দেবেন না। আমরা এমন একটা জগৎ গড়তে চাই, যেখানে পরিচয় মানে কারা আসলেই একে অপরের সঙ্গে মানানসই, সেটাই মুখ্য।”

‘এতকিছু তো শুধু শুরু’—ভবিষ্যতের সামাজিক স্থাপত্যের স্বপ্ন

হ্যাঁ, $৩ মিলিয়নের বিনিয়োগ এক বিশাল কৃতিত্ব। তবুও জনসন ও হারগ্রোর মতে, এটা কেবল শুরু।

তাঁরা Series-কে ভাবছেন একটি নতুন সামাজিক স্থাপত্য হিসেবে, যেখানে AI সাহায্য করবে সঠিক মানুষদের একে অপরের সঙ্গে পরিচিত করাতে।

জনসন বলেন,

“আজ আমরা হয়তো একজনকে একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। কাল সেটা হতে পারে একটি দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব। তারপর, হতে পারে AI এমন কিছু বোঝে যা মানুষও নিজে বোঝে না—কাকে, কবে, কোথায়, ঠিক কীভাবে চেনা উচিত।”

তাঁদের ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি বলছে, Series একদিন হয়ে উঠতে পারে—নতুন প্রজন্মের লিঙ্কডইন, অথবা ‘মানবিক সংযোগের সহচর’, অথবা এমন এক AI, যা বুঝবে আপনার ভেতরের সত্যিকারের প্রয়োজন।

এই স্বপ্নের শুরুতেই তাঁদের বার্তা স্পষ্ট—“Don’t write anyone off.”কারোর সম্ভাবনাকে ছোট করে দেখবেন না।

(এন্টারপ্রেনিয়ার অবলম্বনে)

Image placeholder

Leave a Comment