ড্রেসকোড মানেননি, পা কফিন কার্পেটে!

User avatar placeholder
Written by piash2004

April 27, 2025

পোপ ফ্রান্সিসের শেষযাত্রায় ট্রাম্পের অদ্ভুত পোশাক রীতিমতো ক্ষোভের ঝড় তুলল

২৬ এপ্রিল ২০২৫ সালে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেকের চোখে চরম বেমানান হয়ে উঠেছিলেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া পুরুষদের জন্য নির্দেশ ছিল—সাদা শার্ট, কালো টাই ও গাঢ় রঙের স্যুট পরা আবশ্যক।

ট্রাম্প স্পষ্টতই এই নিয়ম জানতেন, কিন্তু নিজের পরিচিত ঢঙে তিনি নিয়মের নিজস্ব ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন—পরে এলেন নেভি-নীল রঙের স্যুট এবং মিলিয়ে নীল রঙের টাই। স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প যেখানে নারীদের জন্য নির্ধারিত পোশাকবিধি মেনে কালো পোশাক ও দস্তানা পরেছিলেন, সেখানে ট্রাম্পের উজ্জ্বল পোশাক আরও চোখে পড়ছিল। স্বভাবতই ট্রাম্প নিজের স্টাইলে রঙিন পোশাক পরে উপস্থিত হলেন, আর তাতে নেটদুনিয়ায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

অনেকেই ‘এক্স’ (পূর্বের টুইটার) প্ল্যাটফর্মে প্রেসিডেন্টের এই অশোভন আচরণ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। এক ব্যক্তি লিখলেন, “ট্রাম্প একেবারে ক্লাসিক স্বার্থপর। এমনকি অন্ত্যেষ্টিতেও নিজেকে আলাদা করে তুলতেই হবে, জঘন্য।” অন্য এক জন যোগ করলেন, “মন খারাপ করা এক মানুষ, যিনি সর্বক্ষণ মনোযোগের খোঁজে থাকেন। মনের গভীরে হয়তো তিনি এখনও দুঃখিত, কারণ তিনি নিজের কল্পিত বিশেষ মর্যাদা পাননি।”

তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বসার আসন নিয়েও ট্রাম্পের অহংকার যে খানিকটা আহত হয়েছে, তা স্পষ্ট ছিল। যেহেতু ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রবণতা সুবিদিত, তাই অনেকেই ধরে নেন, এই উজ্জ্বল পোশাক তার তরফ থেকে আবারও লাইমলাইট কাড়ার একটা চেষ্টা—যদিও ফলাফল হলো, ভুল কারণে সবার নজর কাড়া।

ট্রাম্পের বিতর্কিত পোশাকই শুধু নয়, পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর তার প্রতি ট্রাম্পের শ্রদ্ধা জানানোর ভাষাও ছিল সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ক্যাথলিক চার্চের এই পথিকৃৎ নেতা ৮৮ বছর বয়সে প্রয়াত হলে, ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে তিনি ও মেলানিয়া ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন। কিন্তু তার ঘোষণার ভাষা বিশ্বের শোকের আবহের সঙ্গে মোটেই মেলেনি।

ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, “মেলানিয়া এবং আমি পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দিতে রোম যাচ্ছি। সেখানে উপস্থিত হতে আমরা মুখিয়ে আছি।”

এই অদ্ভুত বাক্য গঠন ইন্টারনেটবাসীর চোখ এড়ায়নি। ‘এক্স’-এ এক জন লিখলেন, “‘আমরা সেখানে থাকতে মুখিয়ে আছি’—শুনলে মনে হয় যেন শপিং মলের সান্তা ক্লজ তার ডিউটি নিশ্চিত করছেন!” আবার এক ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যে বলা হয়, “কে জানত মৃত্যুসংবাদও এখন সবচেয়ে বর্ণময় পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ-বিজ্ঞাপনে রূপ নেয়?”

‘নার্ডস ফর হিউম্যানিটি’ মন্তব্য করে জানায়, “এটা আবারও প্রমাণ করল, ট্রাম্পের অহংকারের কোনও সীমানা নেই।”

ট্রাম্পের সদ্য প্রকাশিত হোয়াইট হাউসের নতুন ছবি আগে থেকেই তার সীমাহীন আত্মপ্রেমের ইঙ্গিত দিয়েছিল। তবে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর তার প্রতিক্রিয়াগুলো সেই আত্মকেন্দ্রিকতার চূড়ান্ত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কোয়ার ভরে উঠেছিল বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়া, এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টার্মার ও তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়া সময়মতো পৌঁছেছিলেন।

মেলানিয়ার কালো পোশাক ও ঘোমটার বিপরীতে ট্রাম্পের উজ্জ্বল নীল স্যুট এবং নীল টাই আলাদা করে চোখে পড়ছিল, যখন তাঁকে পোপের কফিনের সামনে প্রার্থনা করতে দেখা যায়।

দেশে বসে টিভির পর্দায় এই দৃশ্য দেখে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। “পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ট্রাম্পই একমাত্র পুরুষ নেতা, যিনি গাঢ় পোশাক পরেননি,” লিখলেন এক জন। আরেক জন যোগ করলেন, “সারা বিশ্ব যখন শ্রদ্ধা জানাতে গাঢ় রঙের পোশাক পরে এসেছে, ট্রাম্প তখন উজ্জ্বল নীল স্যুট পরে হাজির। লজ্জাজনক!”

আরও একজন প্রশ্ন তুললেন, “ট্রাম্প কি এতটুকুও চেষ্টা করতে পারেননি অন্তত একটি কালো স্যুট পরার? আর চেয়ারেও সোজা হয়ে বসতে পারলেন না! বিশ্বের রাজা-রানী ও নেতাদের কাছে আমাদের লজ্জায় ডুবিয়ে দিলেন!”

আরও একটি সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে বলা হয়, “ট্রাম্প ও মেলানিয়া—দু’জনেই পোপ ফ্রান্সিসের কফিনের ওপর বিছানো কার্পেটের উপর দিয়ে হেঁটে গেলেন! আহা, কী বেহায়াপনা!”

‘আইরিশ স্টার’ পত্রিকার সূত্রে জানা যায়, এক্স-এর এক ব্যবহারকারী হতাশ কণ্ঠে লেখেন, “ঠিকই দেখেছি আমি—ট্রাম্প আর মেলানিয়া কার্পেটের ওপর দিয়ে হাঁটলেন। নিশ্চিতভাবেই তাদের বলা হয়েছিল, কার্পেটের ওপর হাঁটতে নেই। কিন্তু না, তারা তো ট্রাম্প!”

‘দ্য আর্ট নিউজপেপার’ জানায়, অতিথিদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল—কফিনের নিচে যে কার্পেট রয়েছে, তার ওপর দিয়ে হাঁটা চলবে না। কারণ, ওই কার্পেট পবিত্র এলাকা চিহ্নিত করে এবং সেই স্থানকে পবিত্র ভূমির মর্যাদা দেওয়া হয়।

Image placeholder

Leave a Comment