কাশ্মীর হামলায় ইস্যুতে ভারত জানিয়েছে, তারা সীমিত পরিসরে হলেও দ্রুত কোনও সামরিক অভিযানে যেতে পারে। অপরদিকে, পাকিস্তান স্পষ্ট করে দিয়েছে, ভারত আক্রমণ করলে তারা সামরিক জবাব দেবে।
দুই দেশই বহু বছর ধরে পারমাণবিক অস্ত্র মজুত করেছে। এই অস্ত্রের উদ্দেশ্য যুদ্ধ শুরু করা নয়, বরং যুদ্ধ রোখা।
ভারতের ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ নীতি রয়েছে। অর্থাৎ, কেউ যদি পারমাণবিক হামলা না চালায়, তবে ভারত প্রথমে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে না। এটি কেবল প্রতিক্রিয়ার জন্য সংরক্ষিত।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের নীতি ভিন্ন। তারা ‘ফুল স্পেকট্রাম ডিটারেন্স’ অনুসরণ করে, যেখানে সামরিক আগ্রাসন কিংবা পারমাণবিক হুমকি মোকাবেলায় কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
যদি পাকিস্তান কোনো অস্তিত্ব সংকটে পড়ে বলে মনে করে, তবে তারা প্রথমেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে—এমন সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে ভারতের তুলনায় পাকিস্তানের সামরিক শক্তি অনেকটাই কম। আগেও তিনবার প্রচলিত যুদ্ধে তারা হেরেছে। তাই তারা যুদ্ধ শুরু করার মতো অবস্থায় নেই।
তবে ভারতের ওপর বড়সড় হামলা বা আক্রমণ প্রতিরোধ করতেই পাকিস্তান তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার ব্যবহার করে থাকে।
ভারত ও পাকিস্তান কেউই জানে না অপরপক্ষের কাছে ঠিক কতটি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। ১৯৭৪ সালে ভারত প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করে। পাকিস্তান তার ১৪ বছর পর, ১৯৮৮ সালে।
বিভিন্ন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মতে, পাকিস্তানের হাতে ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। আর ভারতের কাছে রয়েছে ১৭২টি। তবে আরও কিছু বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
দীর্ঘ শত্রুতা ও সন্দেহের পরও ভারত ও পাকিস্তান এমন একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যাতে একে অপরের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে হামলা নিষিদ্ধ।
‘নিউক্লিয়ার ইনস্টলেশনস অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ অ্যাটাক প্রহিবিশন চুক্তি’র আওতায়, প্রতি বছর জানুয়ারিতে দুই দেশ একে অপরের পারমাণবিক স্থাপনার তালিকা আদানপ্রদান করে। টানা ৩৪ বছর ধরে এই রীতি চলে আসছে।
তবে উভয় দেশই এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি—নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি (NPT)—স্বাক্ষর করেনি।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এসব সংঘাত ধীরে ধীরে বাড়ে, যাতে মাঝপথে দুই পক্ষই আবার পিছু হঠার সুযোগ পায়। সীমান্তে গুলি চালনা ও ছোট খাটো সংঘর্ষ প্রায় নিয়মিত।
তবে এবার ঘটনা একটু আলাদা। কারণ, সম্প্রতি হওয়া হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন ভারতীয়। আর তাই, ভারতের অভ্যন্তরে এবার প্রতিশোধের দাবিতে প্রবল চাপ তৈরি হয়েছে।
২০১৯ সালে এক আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন। এরপর ভোররাতে ভারত একটি বিমান হামলা চালায়, যেটিকে তারা পাকিস্তানের একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির লক্ষ্য করে পরিচালিত বলেছিল। পাকিস্তান পরে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামায় এবং একজন পাইলটকে আটক করে। পরে সেই পাইলটকে ফেরত পাঠানো হয় এবং পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
এই ঘটনার মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে যায়—ভারত পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করতেও প্রস্তুত এবং প্রয়োজনে হামলা চালাতেও পিছপা নয়। এর ফলে প্রতিশোধের নতুন মাত্রা তৈরি হয়েছে।
এবারের সংকটে এখনও বড় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কেউই। পাকিস্তান বলছে, তারা ভারতের কিছু যুদ্ধবিমান তাদের আকাশসীমায় ঢুকতে দেখেছে এবং কয়েকটি গোয়েন্দা ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য পাল্টা জবাব কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর হতে পারে। লক্ষ্য হতে পারে সেনা ঘাঁটি বা জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তবে এই কৌশলের মধ্যে ঝুঁকি রয়েছে। কারণ, যদি প্রাণহানি ঘটে, তবে তা অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন যুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের কোনো আগ্রহ নেই।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং অন্যান্য দেশগুলোকেও অনুরোধ করবেন—উভয় পক্ষকে শান্ত করতে যেন উদ্যোগ নেয়।
পাকিস্তানের উপসাগরীয় ধনী মিত্ররা স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার পক্ষেই মত দিয়েছে। ভারতও জি-৭ সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে এই ইস্যুতে যোগাযোগ করেছে।
এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি চীন, দুই পক্ষকেই সংযম দেখাতে বলেছে। জাতিসংঘও ভারত ও পাকিস্তানকে উত্তেজনা কমাতে আহ্বান জানিয়েছে। মোট কথা, কেউই যুদ্ধ চায় না।
পটভূমি:
সম্প্রতি কাশ্মীর অঞ্চলে পর্যটকদের ওপর এক ভয়াবহ হামলায় বহু মানুষ নিহত হন। এতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আবার টানটান হয়ে ওঠে। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে এই হামলার জন্য দায়ী করে। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এখন দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের পথে। একে অপরের নাগরিকদের দেশছাড়া করা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি বাতিলের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ২০১৯ সালের পর এই প্রথম এমন তীব্র সম্পর্কচ্যুতি দেখা গেল।