কানাডার নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন—যুক্তরাষ্ট্র না থাকলে কানাডা “অস্তিত্ব হারাত”। কানাডার নির্বাচনের আগে দেশটির অর্থনীতি ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ট্রাম্প নিয়মিত বিতর্কিত মন্তব্য করছেন।
ওভাল অফিসে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে ট্রাম্প আরো একবার কানাডার নির্বাচনে নিজেকে জড়ালেন। সেখানে তিনি বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র কানাডার পণ্য কেনা বন্ধ করে দেয়, তাহলে কানাডা “রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে পারবে না”।
“আমি সৎ কথা বলছি—একটা রাজ্য হিসেবে ওটা ভালোই চলত,” মন্তব্য করেন ট্রাম্প। আগেও তিনি অর্থনৈতিক চাপে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্যে পরিণত করার হুমকি দিয়েছিলেন।
ট্রাম্প আরো একবার জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কানাডার কিছুই প্রয়োজন নেই—গাড়ি হোক বা তেল।
“আমরা চাই না কানাডা আমাদের জন্য গাড়ি তৈরি করুক, সরাসরি বললে—আমরা নিজেরাই আমাদের গাড়ি বানাতে চাই,” বলেন তিনি।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, ট্রাম্প তাঁর কানাডাকে ৫১তম রাজ্য বানানোর মন্তব্য খানিকটা কমিয়ে এনেছেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে ফোনালাপের পর তিনি সেই কথা আর বলেননি।
এছাড়া বুধবার ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, তিনি কানাডার গাড়ি আমদানির ওপর কর আরও বাড়াতে পারেন। যদিও বর্তমানে গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ ট্যারিফ আছে, তবে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা বাণিজ্যচুক্তির কিছু ছাড় রয়েছে। গাড়ি নির্মাতারা নীতিমালার কিছু পরিবর্তন চাচ্ছেন যাতে করের চাপ কমানো যায়। অন্যদিকে, কানাডার পণ্যের ওপর ট্রাম্প আলাদাভাবে ২৫ শতাংশ হারে কর বসিয়েছেন—তাঁর ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রে মাদকপাচার ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা।
“আমি সত্যিই চাই না কানাডা থেকে গাড়ি আসুক,” বলেন ট্রাম্প। “তাই যখন আমরা কানাডার ওপর ট্যারিফ বসাই, তারা ২৫ শতাংশ কর দেয়। তবে গাড়ির ক্ষেত্রে এটা আরও বাড়তে পারে। আসলে আমরা শুধু বলছি—‘আমাদের তোমাদের গাড়ি দরকার নেই, সম্মান রেখেই বলছি।’”
তবে ট্রাম্প এটাও বলেন, আপাতত অতিরিক্ত কোনো ট্যারিফ দেওয়ার চিন্তা করছেন না, যদিও ভবিষ্যতে বৃদ্ধি সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী কার্নি গত সপ্তাহে বলেন, কানাডার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বাধা দূর করতে পারলে সাধারণ জনগণের উপকার হবে। ২৮ এপ্রিলের ভোটের আগে তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকার যুক্তি তুলে ধরছেন। কার্নির লক্ষ্য হলো ১ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের ১০টি প্রদেশ ও তিনটি অঞ্চলের মধ্যে সম্পূর্ণ মুক্ত বাণিজ্য চালু করা। কানাডায় বহুদিন ধরেই প্রাদেশিক বাণিজ্য বাধা রয়েছে।
কার্নি আরও বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের কাছ থেকে যত কিছু নিতে পারেন, আমরা নিজেদের মধ্যে আরও অনেক কিছু আদান-প্রদান করতে পারি। আমরা চাই একক অর্থনীতি—এটা আমাদের হাতের নাগালেই।”
কার্নির মতে, গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার সম্পর্ক যে রকম ছিল, ট্রাম্পের শুল্কনীতি সেটিকে আমূল বদলে দিয়েছে। ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং কানাডাকে ৫১তম রাজ্য বানানোর হুমকি দেশজুড়ে কানাডিয়ানদের ক্ষুব্ধ করেছে এবং জাতীয়তাবাদের ঢেউ তুলেছে—যার ফলে লিবারেল পার্টির সমর্থনও বেড়েছে। সূত্র মেইল অনলাইন।