‘আমি তোমার মালিক, তোমাকে মেরে ফেলব’

User avatar placeholder
Written by piash2004

April 12, 2025

অ্যান্ড্রু টেটের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও সহিংস নির্যাতনের অভিযোগে যুক্তরাজ্যে মামলা। অতি পরিচিত এই সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের বিরুদ্ধে চার নারীর গুরুতর অভিযোগ

সাবেক কিকবক্সার ও আলোচিত ইনফ্লুয়েন্সার অ্যান্ড্রু টেটের বিরুদ্ধে চার ব্রিটিশ নারী যুক্তরাজ্যের হাই কোর্টে দেওয়ানি মামলা দায়ের করেছেন। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে তাদের ওপর যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন এই নারীরা।

দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসির হাতে এসেছে আদালতের নথিপত্র। সেখানে ধর্ষণ, শ্বাসরোধ, জবরদস্তি করে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া এবং মানসিকভাবে প্রভাবিত করার অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছে।

এক নারীর দাবি, একবার টেট তাঁকে বলেছিলেন, “আমি ভাবছি তোমাকে ধর্ষণ করব কি করব না।” এরপরই তিনি তাঁর গলা চেপে ধরেন ও ধর্ষণের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ।

এই ঘটনার সময় টেটের ফ্ল্যাটে একটি কিকবক্সিং ম্যাচের জন্য ট্রেনিং চলছিল। সেই নারী জানান, এর আগেও তিনি যৌন সম্পর্ক থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন।

তিনি বলেন, “ওই পরিস্থিতিতে টেট চিৎকার করে বলেন, ‘চুপ করে থাকো।’ আমি চুপ থাকলে বলেন, ‘ভালো মেয়ে।’ আমি ভাবলাম, যদি চুপ থাকি, হয়তো গলা থেকে হাত একটু সরাবেন।”নথিপত্র অনুযায়ী, এরপর টেট তাঁকে ধর্ষণ করেন এবং বারবার প্রশ্ন করতে থাকেন, “তুমি কার?”

আরেক নারী অভিযোগ করেন, টেট তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বলেন, তাঁর কথা না শুনলে “নরক নেমে আসবে।”

তিনি আরও বলেন, টেট তাঁকে বিশ্বাস করিয়েছিলেন যে তিনি আগেও মানুষ খুন করেছেন এবং যদি কেউ ওই নারীর সঙ্গে কথা বলেন, তাকেও খুন করে ফেলবেন।

চার নারীর মধ্যে দুইজন ২০১৫ সালে টেটের ওয়েবক্যাম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, বাকি দুইজন ২০১৩ ও ২০১৪ সালে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন।

তাঁরা দাবি করেছেন, এই সম্পর্কের কারণে তাঁরা গভীর মানসিক ও আবেগঘন আঘাত পেয়েছেন।

তাঁদের অভিযোগ, টেটের নির্যাতনের ধরন ছিল ধারাবাহিক— শারীরিক সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মানসিক দমনপীড়ন।

এক নারী, যিনি আদালতের নথিতে “সিয়েনা” নামে উল্লেখিত, তিনি বিবিসিকে বলেন, টেট তাঁকে এমনভাবে শ্বাসরোধ করেন যে তিনি জ্ঞান হারান; কিন্তু তার পরেও ধর্ষণ থামাননি।

টেট তাঁকে বলেন, “আমি তোমার মালিক, তোমাকে মেরে ফেলব।”

তৃতীয় এক অভিযোগকারিণীর দাবি, টেট এতবার তাঁর গলা চেপে ধরেন যে চোখের চারপাশে কৈশিক রক্তনালির বিস্ফোরণে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে যায়।

দুজন নারী শ্বাসরোধজনিত লক্ষণ বা অসুস্থতা অনুভব করার কথা বলেন। এই চারজনই দাবি করেছেন, টেট নিয়মিত ভয় দেখাতেন, মারধর করতেন এবং মানসিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতেন।

অ্যান্ড্রু টেট অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি এগুলোকে “পুরোপুরি বানানো” এবং “মিথ্যার প্যাকেট” বলে মন্তব্য করেছেন।

ব্রিটিশ-আমেরিকান এই ইনফ্লুয়েন্সার বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে পরিচিত মুখদের একজন। টিকটকে তাঁকে নিয়ে তৈরি ভিডিওর ভিউ সংখ্যা ১১ বিলিয়নের বেশি, জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

টেটের দাবি, যৌন সম্পর্ক ছিল পরস্পর সম্মতিতে এবং অন্তত একজন নারী অভিযোগের পরও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।

টেটের আইনজীবীরা বলেছেন, অভিযোগের সময় অনেক আগের হওয়ায় এবং ইমেল বা মেসেজের মতো প্রমাণ না থাকায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।

২০১৯ সালে এই চারজনের মধ্যে তিনজন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (CPS) তখন মামলা না করার সিদ্ধান্ত নেয়।

নিউজ১৮ জানিয়েছে, CPS বলেছিল— অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্তির যথেষ্ট সম্ভাবনা নেই।

এখন এই চারজন দেওয়ানি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, যেখানে তাঁরা ক্ষতিপূরণ চাওয়ার পাশাপাশি নিজেদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বিচার দাবি করছেন। এই মামলার প্রাথমিক শুনানি ১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে টেট ও তাঁর ভাই ট্রিস্টান তিনটি দেশে মানব পাচার, শিশু পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে এখনো তদন্তাধীন।

যুক্তরাজ্য সরকারও ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ধর্ষণ ও পাচারের অভিযোগে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

টেট যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলেও মাত্র চার বছর বয়সে ব্রিটেনে চলে আসেন।তিনি ‘হাসলার্স ইউনিভার্সিটি’ নামের একটি অনলাইন “একাডেমির” প্রতিষ্ঠাতা, যেখানে সদস্যদের থেকে মাসিক সদস্যপদ ফি নেওয়া হয়, আর বিনিময়ে অনলাইন বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্র থেকে প্যাসিভ ইনকাম বা আয় করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন অবলম্বনে

Image placeholder

Leave a Comment