অস্ট্রেলিয়ায় প্রকাশ্যে এসে ফের শিরোনামে কমলা হ্যারিস। এবার একটি সম্মেলনে তিনি এমন সব কথা বললেন, যাতে দর্শক-শ্রোতারা কেবল হতবাকই নন—অনেকেই মাথা চুলকে বললেন, ‘এ কী বললেন উনি!’
সিডনির এক রিয়েল এস্টেট সম্মেলনে মঞ্চে বসেই তিনি হেসে ফেলেন। সঙ্গে বলেও ফেলেন ‘Playboy’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের কথা। হাসতে হাসতেই বলেন নিজের মায়ের এক ‘মজার’ গল্প। সেই গল্পের মধ্যেই উঠে আসে ‘ফাইব্রয়েড’ আর ‘হরমোন’ নিয়ে তাঁর মায়ের সচেতনতার প্রসঙ্গও।
একঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাঁর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন রিয়েল এস্টেট দুনিয়ার বর্ষীয়ান মুখ জন ম্যাগ্রাথ। কথার ফাঁকে কমলা বলেন, “আমার মা খুব বাস্তববাদী ছিলেন। ওঁর একটা মজার কথা মনে পড়ে। উনি বলতেন, ‘Playboy ম্যাগাজিনের কভারে তাকাও তো! জানো কেন মানুষ এগুলো দেখে? মানুষের প্রজনন ধরে রাখার স্বার্থেই এগুলোর সৃষ্টি।’ উনি খুবই প্র্যাকটিক্যাল ছিলেন।”
কমলা হেসে ফেলতেই ম্যাগ্রাথ বললেন, “অসাধারণ এক মহিলা।” তার পর সঙ্গে সঙ্গেই প্রসঙ্গ বদলে ফেলেন তিনি।
সম্মেলনের সেই মুহূর্তের ভিডিও রেকর্ড করেন এক দর্শক। পরে সেটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে।
উইকএন্ডে সিডনির মোসমানের দামি রেস্তোরাঁ ‘Bather’s Pavilion’-এ দেখা যায় কমলাকে। ওই রিয়েল এস্টেট সম্মেলনে তাঁর উপস্থিতির খরচ ছিল দু’দিনের পাস অনুযায়ী ৯৯৫ থেকে ১৬৯৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার।
মঞ্চে নানা বিষয়েই মন খুলে কথা বলেন হ্যারিস। তবে যখন তাঁকে ‘বিনয়’ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি এমন কিছু বলেন, যা আবারও তাঁকে ‘শব্দের গোলকধাঁধা’য় ফেলেছে বলে অনেকের অভিযোগ।
কমলা বলেন, “আমি বিনয়ী হওয়ার চেষ্টা করি না। আর আমি সেটার পরামর্শও দিই না। আমি মনে করি একজন মানুষকে অবশ্যই বিনয়ী হতে হবে। কিন্তু সেই বিনয়কে নিজের লক্ষ্য করা যেন কৃত্রিম হয়ে যায়।”
“যদি কেউ বোঝে—এই বিশ্ব আর এ পৃথিবীর মানুষদের মধ্যে কত বিস্ময়কর, কত মহান কিছু লুকিয়ে আছে… যদি কেউ সময় নেয় আর পাশে বসা কোনো যাত্রীর কথা শোনে, অথবা দোকানে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কারও গল্প শোনে, তাহলেই টের পাওয়া যায়—এই জগতের কত কিছু আমরা জানি না, কত কিছু জানি। এই উপলব্ধি মানুষকে বিনয়ী করে তোলে। মানুষের স্বপ্নগুলো, তাদের সংগ্রাম, তাদের পার হয়ে আসা পথ, এই সবকিছু এক একটি মহিমার দৃষ্টান্ত। মানুষের আত্মা কতটা সুন্দর, সেটা বোঝা যায় তখনই। আমি মনে করি, আমরা প্রজাতিগতভাবে এমন এক জাতি যারা হাল ছেড়ে দেয় না।”
তবে এখানেই থামেননি হ্যারিস। বিনয়ের পাশাপাশি ‘ambition’ বা উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা জোর দিয়ে বলেন।
“আমরা টিকে থাকার জন্য যেমন খাপ খাওয়াতে শিখেছি, তেমনই আমাদের মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষাও আছে। আমি উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে স্বাগত জানাই। আমি সেটা ভালো বলেই মনে করি। এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছেটা থাকা ভালো, তবে সেই পথের পরিশ্রমটা মানতেই হবে। মানুষকে বুঝতে হবে, সে কোন প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রদ্ধা থাকতে হবে সেই বাস্তবতার প্রতি।”
এই বক্তব্যে পুরনো নানা উক্তিও ফিরে আসে তাঁর মুখে—যেমন ‘unburdened by what has been’, ‘speaking truth’ আর ‘passage of time’ ইত্যাদির প্রসঙ্গ।
তিনি বলেন, “সমতা বা স্বাধীনতার জন্য যারা লড়ে যান, তারা যা হতে পারে সেটা দেখেন। অতীতের ভার থেকে মুক্ত হয়ে ভাবেন, কী সম্ভব। এই লড়াইটা আসলে হওয়া উচিত একটা সম্ভাবনার জন্য। তাই আমি বলি, এটা কেবল বিরোধিতা নয়—একটি আদর্শের দিকে এগোনো।”
মঞ্চে থাকা ম্যাগ্রাথ এক সময় বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আপনার সেরা কাজগুলো এখনও সামনে পড়ে আছে। একশো ভাগ নিশ্চিত।”
সঙ্গে সঙ্গেই হেসে জবাব দেন হ্যারিস, “আমি তো এখন বেকার। চলুন, সত্যিটা বলি।”
শেষে যখন তাঁকে রিয়েল এস্টেট দুনিয়ার তরুণীদের উদ্দেশে পরামর্শ দিতে বলা হয়, তখন ফের ফিরে আসেন তাঁর পুরনো এক বক্তব্যে।
“আমি না শুনলে চলি। আমি তো ‘না’-কে নাস্তা হিসেবে খাই,”—I don’t hear no. I eat no for breakfast,’বলেই হেসে ফেলেন তিনি। বিদেশি গণমাধ্যমে অবলম্বনে