কার্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের পাসপোর্ট অফিস থেকে বিভিন্ন কায়দায় বাংলাদেশি নাগরিক সেজে পাসপোর্ট হাতিয়ে নিয়েছে। এদের অধিকাংশ গেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। শুধু সৌদি আরবেই বর্তমানে কমপক্ষে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার অবস্থান বলে একটি সূত্রের তথ্য। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে প্রায় অর্ধলাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট হাতিয়ে নিয়েছে। এদের অধিকাংশ ইতিমধ্যে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে বাংলাদেশি একটি দালাল চক্র, অসাধু রাজনৈতিক নেতা এবং কতিপয় ট্রাভেল এজেন্সি। রোহিঙ্গাদের এ উদ্বেগজনক অপতৎপরতা চলছে রীতিমতো কন্ট্রাক্ট সিস্টেমে। শুধু তাই নয়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা এ দেশে স্থায়ীভাবে আসন গেড়ে অনেকে ট্রাভেল এজেন্সির মালিক বা কর্মকর্তা বনে গেছেন। ফলে এদের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা কন্ট্রাক্ট করে পাসপোর্ট ও ভিসা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। প্রায় অর্ধলাখ রোহিঙ্গার পাসপোর্ট হাতিয়ে নেওয়ার পরিসংখ্যানটি কক্সবাজার অঞ্চলের বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রের। উল্লেখ্য, ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। অনেকের মতে, এ সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুর্বল পুলিশ ভেরিফিকেশন, সত্যায়নকারীর অসাধুতা ও অবহেলা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, পাসপোর্ট অফিস ঘিরে গড়ে ওঠা দালাল চক্রের সহায়তা, প্রকৃত রোহিঙ্গা চিহ্নিতকরণ জরিপ না করা এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি কিছু রাজনৈতিক দলের সমর্থনের কারণে তারা পাসপোর্ট পাচ্ছে।অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাকার বিনিময়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেয়র ও কাউন্সিলররা রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা সনদপত্র ইস্যু করছেন। আর রোহিঙ্গাদের পক্ষে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছেন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), আরাকান মুভমেন্ট, আরাকান পিপলস ফ্রিডম পার্টি, আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (এআরএনও) নেতারা। যারা বাংলাদেশি পরিচয়ে বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছে, তাদের স্থানে নতুন মুখ নিয়ে আসেন এ সংগঠনের নেতারাই। এতে রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনের সদস্য দিন দিন বাড়ছেই। টেকনাফের স্থানীয়রা জানিয়েছে, অর্থ ও ভোটের কারণে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছেন। এলাকার অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা ও বিদেশি মদদপুষ্ট কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের সহায়তা করছেন। সূত্র জানায়, এক দিনের বর্ডার পাস নিয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াতে পারে। তাদের অনেকে বাংলাদেশে থেকেও যাচ্ছে। এক দিনের বর্ডার পাস নিয়ে কোনো বাংলাদেশি মিয়ানমারের মংডুর নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও যেতে পারে না। অথচ রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে ঘুরছে প্রকাশ্যেই।সূত্র জানায়, কোনো রোহিঙ্গা যেন বাংলাদেশে জমি কিনতে না পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তা মানা হচ্ছে না। টেকনাফ, উখিয়ায় রোহিঙ্গারা জমি কিনে বাড়ি করেছে। অনেকেই সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। বিজিবি সূত্র জানায়, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তের গহিন জঙ্গল দিয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এ ছাড়া নাফ নদ ও সমুদ্রপথেও বাংলাদেশ আসছে তারা। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে ২৭৪ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া ও সার্চলাইট স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার আজাদ মিয়া জানান, কঙ্বাজার শহরে অনেক ভাড়া বাড়িতে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে। বাসার মালিকদের তাদের ব্যাপারে সতর্ক করতে বলা হয়। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে যারা সহায়তা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।